জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার বারইপাড়া ঘাটে একটি সেতু না থাকায় উপজেলাটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে আছে। নদীর একপাশে ৮টি ও অন্য পাশে ৬টি ইউনিয়ন। মোট ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে কালিয়া উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় প্রায় ২৩১টি গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
বিশেষ করে জেলা সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলার সরাসরি যোগাযোগের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। কালিয়া উপজেলাকে নড়াইল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এই নদী। জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলার মানুষদের।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বারইপাড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প-কলকারখানা। এলাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য শহরে আনতে চরম দুর্ভোগে পড়েন।
এছাড়া এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে আসতে পারে না। আগুন লাগলে দমকল বাহিনী ও জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
অবশেষে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির প্রচেষ্টায় কালিয়াবাসীর চলাচলের জন্য সেতুটির অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধের পর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নকশা জটিলতার কারণে কাজ চলছে ধীর গতিতে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও মাত্র ২২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
কালিয়া সরকারি শহীদ আব্দুস সালাম ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাইসুল ইসলাম জানান, তিনি কালিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত কলেজে লেখাপড়া করেন। এ জন্য প্রতিদিনই তাকে এই পথেই যাতায়াত করতে হয়। বারইপড়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজের ধীর গতিতে তার আশা ফিকে হয়ে আসছে।
নোয়াগ্রামের অরিফা বেগম জানান, নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হয়। বিশেষ করে রোগীদের নিয়ে যেতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী অমিত দাস বলেন, ‘এখানে একটি ফেরি থাকলেও প্রতি ঘণ্টায় মাত্র একবার চলাচল করে। মালামাল নিয়ে ঘাটে এসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, ফলে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। ’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইমতিয়াজ হোসেন রতন বলেন, ‘সেতুর নকশা জটিলতার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে ২২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘নড়াইল-কালিয়া সড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদার মো. মইনুদ্দীন বাসী ও মো. জামিল ইকবাল যৌথভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ পেয়েছেন। সেতু নির্মাণের জন্য এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
এ বিষয়ে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় বারইপাড়া সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। আমি সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।’